Thursday

খালেদা জিয়াকে নির্বাচন বয়কট না করার অনুরোধ ইইউ’র

আগামী ‘নির্বাচন বয়কট’ না করতে বিরোধী দলীয় নেতার প্রতি আহবান জানিয়েছে ইউরোপীয়ন ইউনিয়ন (ইইউ)। জবাবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি না হলে সে নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না।বৃহস্পতিবার রাতে বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকের ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম হানা এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘‘বিরোধী দলীয় নেতার প্রতি আমাদের আজকের বার্তা হচ্ছে- নির্বাচন বয়কটকে নিরুৎসাহিত করে সংলাপে বসুন।’’‘‘ একই সঙ্গে তাদেরকে (বিরোধী জোট) নির্বাচনের আগে-পরে রাজনৈতিক সহিংসতা ও হরতালের মতো কর্মসূচি পরিহার করারও অনুরোধ করেছি।’’গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার রাতে পৌনে এক ঘন্টা বৈঠকের পর হানা সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।


বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী জানান, ‘‘নির্বাচন বিষয়ে বিরোধী দলীয় নেতা ইইউ রাষ্ট্রদূতদের জানিয়েছেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হলে সেই নির্বাচনে বিএনপির যাওয়ার যৌক্তিকতা কোথায়? নির্বাচন অবশ্যই মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে।’’
উইলিয়াম হানা’র নেতৃত্বে ৮ সদস্যের প্রতিনিধি দলে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন, জার্মানির রাষ্ট্রদূত আলবার্ট কনিয়ে, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মিশেল ট্রিনকুইয়ে, স্পেনের রাষ্ট্রদূত তেজাদা চাকোনসহ ডেনমার্ক, সুইডেন,  নেদারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূতগণ।বৈঠকে চলমান সংকট, আগামী নির্বাচন, সহিংস ঘটনাবলী, সংখ্যালঘু পরিস্থিতি, নির্বাচন পর্যবেক্ষক বিষয়ে বিরোধী দলীয় নেতার সঙ্গে রাষ্ট্রদূতরা আলোচনা করেন।বৈঠকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে শমসের মবিন চৌধুরী ছাড়াও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান ও সাবিহ উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।বৈঠকের পর উইলিয়াম হানা লিখিত বক্তব্য সাংবাদিকদের পড়ে  শোনান। তবে তিনি  সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি।তিনি জানান, আগামী নির্বাচন ও চলামান সংকট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ইইউ প্রতিনিধিদলটি সাক্ষাতের সময় চেয়েছে।লিখিত বক্তব্য উইলিয়াম হানা বলেন, ‘‘ আগামী কয়েক সাপ্তাহ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য সংকটময় সময়। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে সব ধরণের সহযোগিতা করা।’’তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, আমরা বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে দুই বৃহৎ দলের মধ্যে সংলাপ অনুষ্ঠান ও রাজনৈতিক সহিংসতা পরিহারকে গুরুত্ব দিচ্ছি। সংখ্যালঘুদের ওপর নতুনভাবে হামলার ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। এর নিন্দা জানাই।’’হানা জানান, ইইউ বাংলাদেশে একটি স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়। এরকম নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটি দীর্ঘ মেয়াদি ফলাফল বেরিয়ে আসবে যা সব রাজনৈতিক দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।

আগামী নির্বাচনে ইইউ পর্যবেক্ষক পাঠানোর প্রস্তুতির কথাও বিরোধী দলীয় নেতাকে জানিয়েছেন ইইউ রাষ্ট্রদূত।হরতালের মতো কর্মসূচি পরিহার করার অনুরোধ রেখে হানা বলেন, “এরকম কর্মসূচি বাংলাদেশের অগ্রগতির পথে অন্তরায় সৃষ্টি করে এবং দেশের মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে আমরা মনে করি।শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, ‘‘বিরোধী দলীয় নেতা ইইউ প্রতিনিধিদের বলেছেন, মহাসচিব পর্যায়ে সংলাপে বসতে বিএনপি প্রস্তুত রয়েছে। আমরা চাই, সবার কাছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। বিরোধী দলীয় নেতা সব ধরণের সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছেন।’’‘‘পাবনার সাঁথিয়ায় হিন্দু মন্দিরের হামলায় ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি সরকারের একজন মন্ত্রীর সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পত্রিকায় প্রকাশিত এ সংক্রান্ত সংবাদের প্রতি রাষ্ট্রদূতদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন বিরোধী দলীয় নেতা।’’হরতাল কর্মসূচি পরিহারের বিষয়ে রাষ্ট্রদূতদের আহবান সম্পর্কে বিরোধী দলীয় নেতার জবাব কি ছিলো- জানতে চাইলে শমসের মবিন বলেন, ‘‘দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে রাজনৈতিক দল শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করবে- এটাই সাংবিধানিক অধিকার।’’ইইউ’র এই উদ্যোগের কয়েক মাস আগে আরব দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরা ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত শায়ের মোহাম্মদের নেতৃত্বে বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সব দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে তাদের অবস্থান জানিয়েছিলেন।